03 Dec 2024, 11:49 pm

আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসায় বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর দল আবার ক্ষমতায় আসার কারণে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির পথে অগ্রগতিতে কেউ বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না।
তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসায় কেউ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।’
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত মহাসমাবেশে সভাপতির ভাষণে একথা বলেন।
পাকিস্তানের কারগারে ২৯০দিন কারাভোগের পর জাতির পিতার স্বাধীন স্বদেশ ভূমিতে ফিরে আসার মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পূর্ণতা লাভের এই দিনটিকে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন উপলক্ষ্যে আনন্দের দিন হিসেবে পালন করছে আওয়ামী লীগ।
নির্বাচনে ২৯৮টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২২২টি আসনে জয়লাভ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যদি সরকারে না আসতো তাহলে কিন্তু এই দেশ আর এগোতে পারত না।
আজকে আওয়ামী লীগের এমপিদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করেছি এবং আজকে পার্লামেন্টারি পার্টির সভায় আমাকে সর্বসম্মতিক্রমে তাদের নেতা নির্বাচিত করা হয়েছে।
তিনি সংসদ সদস্যদের প্রতি তার ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী এখন রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি চিঠি দেবেন কেননা সরকার গঠন করার জন্য অনুমতি নিতে হবে এবং এই সমাবেশের পরেই বঙ্গভবনে যাবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগ আজকে ক্ষমতায় ফিরেছে বলেই বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা সেই অগ্রযাত্রা আর কেউ ব্যাহত করতে পারবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, অনেকেরই অনেক রকম স্বপ্ন আছে। অনেকেই এই নির্বাচন বন্ধ করতে চেয়েছিল কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনে মানুষ যাতে ভোট দিতে না আসে সেটা ঠেকাতে চেয়েছিল কিন্তু তারপরেও ৪১ দশমিক ৮ ভাগ ভোট পড়েছে। এটা সোজা কথা নয়। এই কারণে যে একক ভাবে আওয়ামী লীগ এবং এর সমমনা দল যখন নির্বাচন করেছে আরেকটি দল তখন নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। আর এবারের নির্বাচন নিয়ে কোন প্রশ্ন ওঠার সুযোগ নেই। কারণ, অত্যন্ত স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবার অনুষ্ঠিত হয়েছে যেটা আপনারাই দেখেছেন।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আইন করে তাঁরাই নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছেন এবং নির্বাচনে কোনরূপ হস্তক্ষেপ না করে সহযোগিতা করেছেন।
“কোনরূপ হস্তক্ষেপ আমরা করিনি বরং সহযোগিতা করেছি। সেই সাথে সাথে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা এবং প্রশাসন থেকে শুরু করে সবকিছুই ছিল সেই নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যাস্ত। যাতে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়, ” বলেন তিনি।
তিনি এ সময় নির্বাচন কমিশনকে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতার জন্য সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি গণমাধ্যমে সাংবাদিকদেরও ধন্যবাদ জানান প্রত্যেকটা জিনিস পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে তুলে আনার জন্য। ফলে মানুষের মাঝে সচেতনতা বেড়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। যে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ শিক্ষা-দীক্ষা এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে স্মার্ট হবে। ইনশাল্লাহ উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।
‘জনগণের শক্তিই বড় শক্তি’ সেটা এই নির্বচনের মধ্যদিয়ে আবার প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা আপনাদের সেবা করার সুযোগ পেয়ে দেশকে নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাব ইনশাল্লাহ।”

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, দলের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম) এমপি, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, আবদুর রহমান এমপি, যুগ্ম মহাসচিব এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম এমপি প্রমুখ সমাবেশে বক্তৃতা করেন।
সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ ও সহ প্রচার সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম।
প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে উঠেই জাতীয় পতাকা নেড়ে জনগণকে শুভেচ্ছা জানান। জনগণও তুমুল করতালি ও শ্লোগানের মাধ্যমে এর উত্তর দেয়। পরে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও প্রত্যক্ষ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীন নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে বেছে নিয়েছিল এবং এর ক্ষমতাসীন দল বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। যদিও সে নির্বাচনে অনেকে  ভেবেছিল বিএনপি  খুব শক্তিশালী দল (সরকারে ছিল) এবং আওয়ামী লীগের সমান সমান আসন পাবে। কিন্তু বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় ঐক্য জোট মাত্র ৩০ টি আসন পেয়েছিল অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এককভাবে  পেয়েছিল ২৩৩ টি আসন। কারণ, জনগণ জানত একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।
তিনি বলেন, এরপর বিএনপি আবারও সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছিল। তারা গণতন্ত্রের পথে আসেনি। অগ্নি সন্ত্রাস, মানুষ খুন এবং আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে হত্যা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচনে কারচুপি করে আমাদেরকে হারানো হয়েছিল এবং ২০০৯ এর পরে এদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। আর আমরা ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক ধারায় রাষ্ট্রপরিচালনা করে দেশের যে উন্নতি করতে পেরেছি সেই উন্নয়নের ফলে আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করেছি এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনকালে জাতিরপিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে যে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছিলেন সেখান থেকে আমরা এই উত্তরণ ঘটাই। ২০২৬ সাল থেকে এই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা কার্যকর শুরু হবে।
তিনি বলেন, আমার অবাক লাগে যখন মিলিটারি ডিকটেটররা জনগণের ভোট কারচুপি করে ক্ষমতায় আসতো তখন সেই নির্বাচন নিয়ে যারা কথা বলতো না, আর আজকে যখন আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি, জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি, তখনই আমাদের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন, নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন। যখন নির্বাচন মানেই ছিল ১০ হোন্ডা, ২০টা গুন্ডা নির্বাচন ঠান্ডা। আজকে আর সেই অবস্থা নেই। জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি। গণতন্ত্রকে সুসংহত করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যহত আছে বলেই আজকে বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে। আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। দারিদ্রের হার কমেছে। মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করছি। চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি, সাক্ষরতার হার বেড়েছে। মানুষের ভাগ্যপরিবর্তনে আমরা যে কাজ করেছি তার শুভফল মানুষ পাচ্ছে।
তিনি বলেন, সব দিক থেকে যখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সারাবিশ্ব যেখানে বলে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। তখন আমাদের দেশের ভেতরে কিছু আছে দালাল শ্রেণি আর কিছু বাইরের লোক তাদের চোখে কিছুই ভালো লাগে না। মনে হয় যেন একটা অগণতান্ত্রিক সরকার আসলেই তারা খুশি।
“আমাদের এই সরকারে আসা অত্যন্ত কঠিন কাজ ছিল। বারবার ষড়যন্ত্র চক্রান্ত হতে থাকে। কৃতজ্ঞতা জানাই এদেশের জনগণ প্রতি তারা সকল বাধাবিঘœ উপেক্ষা করেছেন,” বলেন তিনি।
তিনি বলেন,  হরতাল, অবরোধ, জ¦ালাও পোড়াও, মানুষ পুড়িয়ে মারা, ট্রেনে আগুন দিয়ে মা ও তাঁর শিশু সন্তানকে পুড়িয়ে মেরেছে, ট্রেনের ফিসপ্লেট খুলে বগি লাইনচ্যুত করে মানুষ হত্যা, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সে হামলা, পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা এগুলো আপনারা দেখেছেন। সেই ২০১৩ ও ১৪ সালের মত ধ্বংসাত্মক কাজ আবারো আমরা দেখলাম। মানুষ যাতে নির্বাচনে ভোট না দেয় সেজন্য লিফলেট বিলী করা ও মানুষকে ভোট থেকে বিরত রাখার চেষ্টাও তারা করেছে (বিএনপি)। আমরা বাধা দেইনি। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সকল বাধা উপেক্ষা করে এই নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করেছে এবং ভোট দিয়েছে আওয়ামী লীগকে। এই নির্বাচনকে তারা গ্রহণ করেছে। এই জন্য আমি জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
তিনি বলেন, “শত বাধা, ভয়-ভীতি, অগ্নি সন্ত্রাস সবকিছু উপেক্ষা করে আজকে তারা নির্বাচন করেছে এবং নিজের ভোট নিজে দিয়েছে। গ্রামে গঞ্জেও স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে মানুষ ভোট দিয়েছে। আমাদের মহিলা ভোটররাও ছুটে এসেছে, ভোট দিয়েছে। এমনকি ১৩০ বছরের এক বুড়িমা পর্যন্ত ভোট দিতে গিয়েছিল।”
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির প্রসঙ্গ টেনে জাতির পিতার কন্যা বলেন, সেদিন পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু ফিরে এসেছিলেন। যার মাধ্যমে স্বাধীনতা পূর্ণতা লাভ করে। লন্ডন ও ভারত হয়ে দেশে ফিরেই জাতির পিতা সবার আগে ছুটে গিয়েছিলেন বাংলার মানুষের কাছে। এই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণে একটি দেশের ভবিষ্যৎ, উন্নয়ন, সব পরিকল্পনা, দুঃখী মানুষের হাসি ফোটানোর পরিকল্পনা, মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ তিনি তুলে ধরেছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 7802
  • Total Visits: 1365782
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1669

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ১লা জমাদিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১১:৪৯

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018